Wednesday, April 7, 2010

“দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ”- আমরা কতটুকু দেশপ্রেমিক? স্বাধীনতা লাভের এতগুলো বছর পর আমরা প্রকৃতপক্ষে কতটুকু স্বাধীন?

একটি দেশের স্বাধীনতা বলতে কি শুধুমাত্র সেই দেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে আইনগতভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তার প্রয়োগ করাকেই বুঝায়? না তা নয়। একটি দেশকে প্রকৃত স্বাধীন তখনি বলা যাবে যখন সেই দেশে ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, মানবিক স্বাধীনতা থাকবে। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রত্যেক মানুষই চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি স্বাধীন হয়েছে। আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, এতগুলো বছরেও আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে পারিনি। দল মত নির্বিশেষে শান্তি শৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজ গঠনে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩)। ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না। করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।’ (সূরা আনফাল, আয়াত ৪৬)। আজও আমরা পারস্পরিক রাজনৈতিক বিবাদ ও শত্রুতা দূর করতে পারিনি। পারিনি দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, শিক্ষিত ও দুর্নীতিমুক্ত জনপদ গড়ে তুলতে। স্বাধীনতার ৩৯টি বছরে দেশবাসীর স্বপ্ন আর প্রত্যাশার রূপায়ণ সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু কেন? আমাদের কিসের অভাব? ঘাটতি শুধু এক জায়গাতেই। তা হল দেশপ্রেম।

দেশপ্রেম স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করে, অর্থবহ করে, দেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতি মজবুত করে। দেশপ্রেম থাকলেই দেশ রক্ষার প্রশ্ন আসে, নি:স্বার্থভাবে দেশের জনগণের সেবার প্রশ্ন আসে। দেশপ্রেম না থাকলে দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাওয়াই হয় মুখ্য। ‘হুব্বুল অতানে মিনাল ইমাম’ বা দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) জালিম, ভণ্ড প্রতারক ও সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে মক্কা এবং মদিনা স্বাধীন করে অল্প সময়ের মধ্যে পুরো আরব ভূমিকে ভরে দিয়েছিলেন শান্তি ও নিরাপত্তায়, শৃংখলায়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষম বণ্টনে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে, ভ্রাতৃত্ববোধে এবং কল্যাণে। মহানবী (সাঃ) এর রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসনের যে উজ্জ্বল বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাই, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে। মহানবী (সাঃ) তার প্রশাসনে যোগ্য ব্যক্তিদের উপযুক্ত পদে আসীন করেছিলেন, যারা ছিলেন সৎ, দক্ষ, আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রাণ। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা ছিলেন সবচেয়ে অগ্রগামী। জনগণের জন্য কাজ করাকে যারা ইবাদত বলে মনে করতেন। তাদের বিরুদ্ধে ছিল না কোনো দুর্নীতির অভিযোগ।

দু:খের বিষয় হলো আমরা অধিকাংশই সেই সফল, সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক প্রিয় নবীর উম্মত হয়েও স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে কী দিতে পেরেছি দেশ ও দেশের মানুষকে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ নেই। ‘যে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ (বা অন্যায়ভাবে গোপন) করবে সে কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত সম্পদ সাথে নিয়ে হাজির হবে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬১)। পৃথিবীতে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আজ পরিচিত। কিন্তু বিশৃঙ্খলা, বিবাদ, দুর্নীতি, প্রতারণা, ঘুষ, লুট, হানাহানি ক্ষমতার অপব্যবহারে আমরা আজ সবার শীর্ষে স্খান করে নিয়েছি। আজ আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই বলেই সব জায়গাতেই একটা অরাজক পরিস্থিতি। ধনী গরীব বৈষম্য আজ ব্যাপক। কারও মাথাগুঁজার ঠাঁই নাই আবার কারও বা রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অট্টালিকা; কেউ ভিক্ষা করে আবার কেউ বা অবৈধ টাকা রাখার জায়গা পায় না। আজ মানুষের মধ্যে এত ভেদাভেদের একমাত্র কারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম নেই, মানবতাবোধ নেই, ভালোবাসা নেই, নেই একে অন্যের প্রতি কোনো শ্রদ্ধাবোধ। আজকের এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করতে হবে। ভালোবাসতে হবে দেশের মানুষকে, ভালোবাসতে হবে দেশকে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে কিছু দেয়ার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। তবেই একটা সুখী-সমৃদ্ধিশালী, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment