মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে অনিন্দ্যসুন্দর আদর্শ পেশ করেছেন, তা যেমন চিরস্মরণীয়, তেমনি চিরঅনুকরণীয়। পবিত্র কুরআনে তাঁর মহান আদর্শকে 'উস্ওয়াতুন হাসানা' বা উত্তম নমুনা বলা হয়েছে। তাঁর পবিত্র জীবনের প্রতিটি ঘটনা ছোট হোক কি বড়, ব্যক্তিজীবনের হোক কি সমাজ ও জাতীয় জীবনের সবই সংরক্ষিত রয়েছে। এমনকি তাঁর জীবনের প্রতিটি কথা কণ্ঠস্থ করা হয়েছে। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ সমগ্র মানবজাতির জন্য একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ।
আমাদের দেশ তথা বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবাদের অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্তার সবাইকে শঙ্কিত করে তুলেছে। রাসূল (সাঃ) এর আদর্শই সন্ত্রাস দমনের একমাত্র পথ। নৈতিক অবক্ষয়ের সিঁড়ি বেয়ে সন্ত্রাস নামে। সুতরাং সন্ত্রাস দমন করতে হলে জাতির চারিত্রিক উন্নতি অর্জন করা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এ শর্ত পূরণের জন্য নবী সাঃ-এর চরিত্রই অনুসরণযোগ্য। রাসূল (সাঃ) এর চারিত্রিক গুণাবলির মধ্যেই সন্ত্রাস দমনের প্রাথমিক পদক্ষেপের সন্ধান পাওয়া যায়। অন্যায়, অসাধুতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এমনই এক সহযোগী তরুণ সংগঠন মহানবী (সাঃ) ই দাঁড় করিয়েছিলেন। 'হিলফ-উল-ফুজুল' নামের ওই প্রতিরোধক যুব সংগঠনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজকের আধুনিক বিশ্বেও রয়েছে অম্লান। নেতৃত্বের লোভে সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়। রাসূল (সাঃ) নেতৃত্বের লোভকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখেছেন। যারা নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য লালায়িত তারা নেতা হওয়ার অযোগ্য বলে তিনি ঘোষণা করেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অসৎ চাপে বিচার ও শাসন বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। তিনি শাসন ও বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বড় বড় সন্ত্রাসী ঘটনার মূলে কখনো কখনো দেখা যায় সামান্য সহিষ্ণুতার অভাব। এই সহিষ্ণুতাবোধে আমরা উদ্দীপ্ত হতে দেখি আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর আদর্শে, যার সামান্যতম প্রয়োগও সন্ত্রাস দমনে কার্জকরী ভূমিকা পালনে সক্ষম। সন্তানকে অপরাধী বানাতে পিতা-মাতাই বড় কারিগর। তাই সন্তানকে সচ্চরিত্রবানরূপে গড়তে নবীর আদর্শেই খুঁজে পাওয়া যায় সুষ্ঠু ও আলোকিত দিকনির্দেশনা। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষরূপে গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ইসলাম পিতা-মাতার ওপর অর্পণ করেছে। তারা যদি পরিকল্পিতভাবে তাদের সে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সন্তানদের পক্ষে সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা সহজ হবে না। ভ্রাতৃত্ববোধের অভাব সন্ত্রাসের জন্য দায়ী। সব মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধের অদৃশ্য সুতোয় গেঁথে দিয়েছিলেন আমাদের নবী। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা সবাই মিলে একটি অখণ্ড ভ্রাতৃসঙ্ঘ।’ মানব জাতির সবাইকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে বাঁধা গেলে কি আর সন্ত্রাস জন্ম নিতে পারত কখনো?
হাদিসে আছে “হুব্বুল অতানে মিনাল ইমান”-দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। মহানবী (সাঃ) নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ও দেশের মানুষকে বেশি ভালবাসতেন। আবার সাধারন মানুষও তাঁকে প্রাণ ভরে ভালবাসতেন। রাসূল (সাঃ) এর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়েই মরু আরবের উগ্র মানুষগুলো তাঁকে ছোটবেলাতেই আল-আমিন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়েছেন। এটা তাঁর দেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। আজ আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই বলেই মানুষে মানুষে এত দ্বন্দ্ব, হানাহানি, মারামারি আর খুনখারাবি।
গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সেই সাথে উন্নত বিশ্বে আজ দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটে আজ মহানবী (সাঃ) এর বাণী কার্জকর হয়ে উঠেছে। যেমন একচেটিয়া ব্যবসা ভাল নয়। যে লোক গ্রাম থেকে খাদ্যশস্য কিনে এনে শহরে খুব বেশি দামে বিক্রি করতে না চায়, শেষ পর্জন্ত সেই হয় বেশি লাভবান। কারন সে বেশি বিক্রি করতে পারে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা খাদ্যশস্য মজুত করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করার কথা চিন্তা করো না। কারণ তাতে লাভ হবে কম।” ইসলাম কখনই একচেটিয়া ব্যবসায় সমর্থন করে না। আজকে বিশেষ যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার একটি কারণ হলো একচেটিয়া ব্যবসার প্রবণতা। ইসলাম কত দিন আগে শ্রমজীবি মানুষের কথা ভেবেছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার তার ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দাও।” আর ব্যবসায় অসততাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন। এ ধরনের ব্যবসায়ী তাঁর উম্মত নয় বলতেন।
বর্তমান সময়ে যদি কেউ একজন আদর্শ শিক্ষক, একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, একজন আদর্শ ধর্মপ্রচারক, একজন আদর্শ সমাজ সংস্কারক এবং একজন মানবতাবাদীকে খুঁজতে চায় তাহলে তার অনুসন্ধান তাকে নিয়ে যাবে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে। তিনি বুঝতে পারবেন যে সব মানুষের জন্য এবং মানুষের সব কর্মের জন্য নবীজী মানবজাতির আদর্শ, সর্বকালের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
No comments:
Post a Comment