ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং পরিপূরক। সৃষ্টি বৈচিত্র্যের মেলায় বেশকিছু ক্ষেত্রে পুরুষ অপূর্ণ, নারীর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। এই অপূর্ণতা নিরসনে একজনকে আরেকজনের পরিপূরক করে সৃষ্টি করা হয়েছে। নানা রঙ্গের ফুলের বাহারে যেমন একটা স্তবক গড়ে উঠে মনোহরী অবয়বে তেমনিভাবে নারী-পুরুষ মিলেই মনুষ্য একক গড়ে উঠে বাহারী মাত্রায়।
মা-ছেলে, পিতা-কন্যা, ভগ্নি-ভ্রাতা এ সম্পর্ক তো দ্বান্দ্বিকতার কল্পনারও বাইরে। এ ক্ষেত্রে তো মায়ের পায়ের নীচে ছেলের বেহেশত সংস্থাপন করে মায়ের আনুগত্য ছাড়া ছেলের অন্য কিছু চিন্তারও অবকাশ নেই। হাদিসে পাকে হেদায়াত দেয়া হয়েছে পিতাকে স্পষ্ট ভাষায়, বাইরে গেলে পুত্র-কন্যার জন্য কিছু নিয়ে আসবে, আর ঘরে এসে কন্যার হাতেই আগে তুলে দিবে সেই উপহার। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আসমান থেকে প্রেরিত হন এক পবিত্র দূত ফেরেস্তা যিনি সেই পরিবারের উপর রহমত ও বরকতের আশীষ নাযিল করেন বিশেষভাবে। পুত্র জন্মানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। নারী-পুরুষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্ত্রী-স্বামীর ক্ষেত্রে আপাত দ্বান্দ্বিকতার কল্পনা হয়ত হতে পারে। এ সম্পর্ক মা-পুত্র, পিতা-পুত্রী, ভ্রাতা-ভগ্নীর মতো জন্মজ ও স্বভাজ সুসম্পর্কভিত্তিক নয়। এ সম্পর্ক অর্জিত, গড়ে তোলা সমঝোতা। এই ক্ষেত্রেও ইসলাম পরস্পর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে পরস্পর অবিচ্ছেদ্য পরিচ্ছদ হিসাবে। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা তাদের পরিচ্ছদ আর তারা তোমাদের পরিচ্ছদ।ইসলাম নারীকে সর্বক্ষেত্রেই অধিকার দিয়েছে বেশি আর পুরুষকে দায়িত্ব দিয়েছে বেশি। ইসলাম নারীর জন্য সকল প্রকার কল্যাণকর বাস্তবসম্মত ও বৈধ অধিকার দিয়েছে। যেমন-মা হিসাবে নারীর যে অধিকার ইসলাম দিয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে যশোগাঁথা হয়ে থাকবে। যেমন- একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গিয়ে বলেছিলেন, কাকে খেদমত করবো? রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমার মাকে, তারপর কাকে? তোমার মাকে, তারপর কাকে? তোমার মাকে, তারপর কাকে? তোমার পিতাকে। এখানে দেখা যাচ্ছে মা হিসাবে নারী জাতিকে পিতার চেয়ে তিন গুণ অধিকার বেশি দিয়েছে। বিয়ের অধিকারের ক্ষেত্রে তো ইসলামে নারী সম্পূর্ণ স্বাধীন। এমনকি পিতা-মাতাও তাকে এই বিষয়ে কোনরূপ চাপ প্রদানের ক্ষমতা রাখে না। নবী (সাঃ) এর যুগে একবার এক কন্যাকে তার পিতা সম্মতি না নিয়েই স্বীয় পছন্দমত বিয়ে দিয়ে দেয়। তখন সেই কন্যা মসজিদে নববীতে সকলের সামনে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, এ তোমার অধিকার। ইচ্ছা করলে পিতার পছন্দকে গ্রহণ করতে পার আর না চাইলে তা প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। তখন এই মহিলা বললেন, আমি আমার পিতাকে বিব্রত করব না। তবে এখন এসেছি কিয়ামত পর্যন্ত নারীদের অধিকারকে স্পষ্ট করার জন্য।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোন তারতম্য নেই ইসলামে। আমরা জানি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া সামাজিক মূল্যায়ন অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত হয় না। তাই এক্ষেত্রেও নারীদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি স্বাধীনভাবে তাদের জন্য নিজেদের পেশা বেছে নেয়ার অধিকার স্বীকৃত। সাহাবী মহিলাগণের অনেকেই তৎকালে প্রচলিত বহু পেশা স্বাধীনভাবে অবলম্বন করেছিলেন। ইসলামে পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদে নারীদেরকে পুরুষের অর্ধেক পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু নারী সব অর্থনৈতিক ব্যয় থেকে মুক্ত। নারীর উপার্জনে স্বামী, পিতা, ভাই পুত্র কারোরই হস্তক্ষেপের অধিকার দেয়া হয়নি। নারী যা উপার্জন করবে তা তার, এ কথা কুরআন মজীদে একাধিকবার উল্লেখ রয়েছে। উপার্জনের ক্ষেত্রে যেমন তার পূর্ণ অধিকার তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও তাকে পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বামী, পিতা বা অন্য কোন পুরুষের অনুমতি নেয়ার কোন প্রয়োজন রাখা হয়নি। তবে হালাল-হারামের গণ্ডি পুরুষের মতো নারীর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।
পরিশেষে, নারীর প্রতি সদয় অথবা নিষ্ঠুর আচরণে এক জাতির সাথে আরেক জাতির এবং এক আইনের সাথে আরেক আইনের যতই পার্থক্য ও বৈপরীত্য থাকুক না কেন, ইসলামের অভ্যুদয়ের আগে নারী কখনো কোনো সমাজে তার যথাযোগ্য সামাজিক ও আইনগত মর্যাদা লাভ করেনি।
No comments:
Post a Comment