Thursday, October 29, 2009

ইসলামে জ্ঞানচর্চা

আমরা অনেকেই আমাদের অজ্ঞতাবশত মিত্যাযুক্তির উপরে ভিত্তি করে অনেক বিষয় নিয়ে বির্তক করে থাকি। কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট, সত্যনির্ভর জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ের বিতর্ক বা আলোচনা করা চলে না। তাই প্রকৃত সত্য জানতে হলে অবশ্যই আমাদের জ্ঞানচর্চার দরকার। জ্ঞান মানুষকে আলোর পথ দেখায় আর মুর্খতা অন্ধকারের। জ্ঞান মানুষের একটা শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানুষ পশুত্বের স্তর থেকে মনুষত্বের স্তরে উঠে আসতে পারে সত্যিকার জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে।

জ্ঞান অন্বেষনের ফলে মানুষের বিশ্বাসের ভীত মজবুত হয় এবং সে প্রকৃত চিন্তাশীল হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা অতি গুরুত্বপুর্ন মাধ্যম। ইসলামে এ কারনেই বিদ্যা অর্জনকে ফরজ ঘোষনা করেছে। মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন-‘বিদ্যা অম্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য। (ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে সুপথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসূল পাঠিয়েছেন। জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে নবী-রাসূলদের কাছে আল্লাহর বাণী তথা কিতাব এসেছে। এই কিতাবের সাহায্যে মানুষকে শিক্ষাদানের কাজটা ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। মহান আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হলো আল-কোরআন। এই আল-কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ বাণী হলো ‘ইক্‌রা বিইসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক...’ অর্থাৎ, পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন; সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। (সূরা আলাক, আয়াতঃ ১-২) এখানে শিক্ষার আহবান যেমন জানানো হয়েছে তেমনি আল্লাহর সৃষ্টিকৌশল নিয়েও ভাবতে বলা হয়েছে।

পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর সেই জ্ঞান দ্বারা সে ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। তাই জ্ঞান অর্জনের তাগিদ নিয়ে আল-কোরআনে অসংখ্য বাণী অবতীর্ণ হয়েছে।-“আর যে ব্যক্তি ইহলোকে (জ্ঞানার্জনে) অন্ধ ছিল, সে পরকালেও অন্ধ থাকবে এবং পথ হতে আরও বিচ্যুত হবে।”(সূরা বনী ইসলাইল, আয়াতঃ ৭২)। জ্ঞানী ব্যক্তিদের সর্বত্র উচ্চ মর্যাদার কথা উল্লেখ করে আল কোরআনে বলা হয়েছে-“বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে যারা জ্ঞানবান”। (সূরা যুমার আয়াতঃ৯)

জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সত্যকে জানা, উপলব্ধি করা ও উদঘাটন করা যায়। মানুষের ভাগ্যে আল্লাহর অবদানের শ্রেষ্ঠ দান হলো জ্ঞান। কিন্তু এই জ্ঞানকে কাজে না লাগালে তার কোনো মূল্যই থাকে না। হযরত আলী (রাঃ) বলেন-“বিদ্বান ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো গৌরবের কিছু নেই। কেননা তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং সঠিক পথের অনুসন্ধানকারীদের জন্য পথ-প্রদর্শক। আর মানুষের মূল্য বিদ্যার দ্বারাই হয়, যা তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। অপর দিকে মূর্খ লোকেরা বিদ্বানদের শত্রুসমতুল্য। তাই তুমি বিদ্যার্জনে সচেষ্ট হও এবং তার প্রতিদান চেও না। কেননা মানুষ মৃত আর বিদ্বানেরা চিরঞ্জীব।”

জ্ঞানদান শ্রেষ্ঠতম দান। ইসলাম জ্ঞান অর্জন করতে যেমন উৎসাহ দিয়েছে, তদ্রূপ জ্ঞান বিতরণ করতেও কখানো পিছপা হয়নি। মহানবী (সাঃ) ছিলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁর থেকে সাহাবীরা শিক্ষা গ্রহণ করে পৃথিবীর দিকবিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। কোরআন এমন একটি আসমানী মহাগ্রন্থ, যা মানবজাতির জ্ঞানের সকল তৃষ্ণাকে মেটাতে পারে। অতএব, কোরআন থেকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের বহু জটিল সমস্যার সমাধান পেতে পারি, এ ছাড়া একটি উন্নত ও কল্যাণমুখী সমাজ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে পারি। মোট কথা, কোরআনের প্রথম আহবান ‘ইকরা’-এর প্রতি সাড়া দিয়ে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করব এবং সমাজের সর্বস্তরে তা বিতরণ করব। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন, আমিন।

No comments:

Post a Comment